স্বনির্ভরতার সন্ধান উপার্জনের দিশা দেখাচ্ছে মেশিনে তৈরি মাটির ভাঁড়, প্রদীপ

স্বনির্ভরতার সন্ধান
উপার্জনের দিশা দেখাচ্ছে মেশিনে তৈরি মাটির ভাঁড়, প্রদীপ

প্লাস্টিকের রমরমার যুগেও চায়ের দোকানে এখনও ক্রেতা চান মাটির ভাঁড়ে চা খেতে। সরবত থেকে রসালো মিষ্টি, তারকা হোটেল থেকে নিমন্ত্রণ বাড়ি, সর্বত্র উপস্থিতি মাটির পাত্রের। পরিবেশবান্ধব সামগ্রী ব্যবহারের প্রবণতা বাড়ায় এর চাহিদা কখনও কমবে না। মেশিনে মাটির পাত্র বানিয়ে বিক্রি করে ভালো উপার্জন করতে পারেন।

চা-প্রেমীরা মাটির ভাঁড়ে চা পান করতে পছন্দ করেন। মাটির ভাঁড় পরিবেশবান্ধব। শুধু পথের পাশের চা-দোকানে নয়, এখন অভিজাত কাফেগুলিতেও চা পরিবেশনের জন্য মাটির ভাঁড় ব্যবহার করা হচ্ছে। মাটির ভাঁড় ব্যবহৃত হয় মিষ্টির দোকানে রসালো মিষ্টি কিংবা দই দেওয়ার জন্য। সরবত বা লস্যির মতো ঠান্ডা পানীয়ও মাটির গ্লাস বা ভাঁড়ে দেওয়া হয়।

মাটির পাত্র ব্যবহারের মধ্য দিয়ে আভিজাত্য ও ঐতিহ্য ফুটে ওঠে বলে অনেকে মনে করেন। তাই ইদানীং বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় এবং নেমন্তন্ন বাড়িতেও মাটির পাত্রে অতিথিদের খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে। মাটির ভাঁড়, গ্লাস বা পাত্র তৈরির প্রধান

উপকরণ এঁটেল মাটি। এটি আমাদের রাজ্যে খুবই সহজলভ্য। স্বল্প বিনিয়োগে এবং অল্প জায়গায় মাটির বিভিন্ন পাত্র করা যায়। একজনই উৎপাদন উৎপাদনের গোটা কাজটা সামলাতে মাটির ভাঁড় তৈরির করতে চাইলে এখন আর কুমোরের চাকার প্রয়োজন নেই। দা বিকল্প মেশিন এসে গিয়েছে। একটি মেশিনেই ডাইস বদল করে একাধিক দ্রব্য তৈরি করা যাবে। বেকার যুবক-যুবতীরা এই কাজের কথা ভাবতে পারেন। কারণ মাটির হ পাত্র, ভাঁড়, প্রদীপ ইত্যাদির প্রয়োজন কমবে না। ফলে ব্যবসাটি লাভজনক।

মেশিনের খুঁটিনাটি

আমাদের রাজ্যে মাটির ভাঁড়, মাস, প্রদীপ তৈরির মেশিন তৈরি করেছে মা এন্টারপ্রাইজ। দু'ধরনের মেশিন পাওয়া যায়, ম্যানুয়াল ও সেমি অটোমেটিক। ৬. ম্যানুয়াল মেশিন তিন রকমের সাড়ে চার ফুট, সাড়ে পাঁচ ফুট ও ছ'ফুটের। সাড়ে চার ফুটের মেশিনে ডাইস বদল করে মাটির ভাঁড়, প্রদীপ তৈরি করা যায়। সাড়ে ে পাঁচ ফুটের মেশিনেও ডাইস বদল করে প্রদীপ এবং ৪০ থেকে ২৬০ মিলিলিটারের মাটির ভাঁড় ও গ্লাস তৈরি করা যাবে। ছ'ফুটের মেশিনে আরও একটু বেশি ঝে মিলিলিটারের পাত্র তৈরি করা যাবে। ম্যানুয়াল মেশিন কিনলে এর সঙ্গে আরও দু'টি মেশিন কিনতে হবে। একটি মাটি মিশ্রণের মেশিন এবং অন্যটি মাটি গুঁড়ো করার মেশিন। সব মিলিয়ে মেশিনের জন্য খরচ হবে দু'লক্ষ চল্লিশ হাজার থেকে দু'লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা। সেমি অটোমেটিক মেশিনটির দাম ৯৫ হাজার টাকা, এক্ষেত্রে মাটি গুঁড়ো করার মেশিনটি কিনতে হবে না। যদিও এক্ষেত্রে মাটি মিশ্রণ করার মেশিনটি লাগবে। যে-কোনও মেশিনের সঙ্গেই ক্রেতার পছন্দমতো দুটো ডাইস ফ্রি দেওয়া হয়। আরও ডাইস প্রয়োজন হলে তা কিনে নিতে হবে।

সংস্থার কর্ণধার চিরঞ্জিত বাগ 'কর্মক্ষেত্র'-কে জানালেন, 'ভারতের অন্যান্য রাজ্য এবং বাংলাদেশেও আমরা মেশিন সরবরাহ করছি। মেশিনে তৈরি হওয়া। জিনিসটি পোড়ানোর জন্য ভাটি প্রয়োজন। চার ফুট বাই চার ফুটের একটা ভাটি যথেষ্ট। সেটিও তৈরি করতে আমরা সাহায্য করি। অনেকে গ্যাস বার্নারের সাহায্যে পোড়ানোর কাজ করেন। একটি ৫০ মিলিলিটারের ভাঁড় তৈরি করতে খরচ পড়ে ২৫ থেকে ২৭ পয়সা, সেটি বিক্রি হয় ৬৫ পয়সায়। সুতরাং ঠিকমতো ব্যবসা করলে লাভ বেশ ভালোই করা যায়। বারাসত ও রায়গঞ্জ— দু'টি জায়গায় আমাদের আউটলেট আছে, যে-কোনও আউটলেটে গিয়ে জিনিসটি দেখে কিনতে পারেন। মেশিন ডেলিভারি দেওয়া এবং ক্রেতাকে মেশিন চালিয়ে কী ভাবে জিনিসটি তৈরি করতে হবে তা শিখিয়ে দেওয়া হবে কোম্পানির তরফে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে।'