• কবিতার শৈলীবিচার / গদ্য ও পদ্যের দ্বন্দ্ব


                                               প্রচল আলোচনায় গদ্য-পদ্যের সীমারেখা টানা হয়। এই সীমানা টানা শৈলীর প্রয়োজনে কতটা লাগে? শৈলীর সাধারণ অভিজ্ঞতা বলে যে, গদ্য-পদ্যের সেভাবে ভেদরেখা নেই। সুবোধ্য এবং সুসঙ্গত অভিজ্ঞতার ধরন গদ্য বা পদ্য যে-কোনো রূপ নিতে পারে। এই রূপগ্রহণ কতকগুলো পরিস্থিতির উপর নির্ভরশীল, যাকে পরিস্থিতির সমাপতন (কো-ইনসিডেন্স অব সারকামস্ট্যান্সেস) বলা ভালো। এখানে যুগের হাওয়া সবচেয়ে বেশি সক্রিয় থাকে। একটা যুগে শৈল্পিক এবং সাহিত্যিক কিছু আঙ্গিক শিল্পীদের উপর চাপ সৃষ্টি করে। শিল্পী সেই চাপকে অমান্য করতে পারেন না। কারণ, হয়;

১) তাঁকে জীবনধারণ করার জন্য লেখকবৃত্তি বেছে নিতে হয়। তাঁর লেখা পণ্য বলে যুগের আদেশ মানতে

২) বেশিরভাগ শ্রোতা বা পাঠকের কাছে পৌঁছতে হলে যুগ-প্রচল প্রকরণকে বরণ করে নিতে হয়।

বাংলা সাহিত্যের পুরানো পৃষ্ঠা ওলটালে দেখা যাবে যে, এই ভবিতব্যকে বরণ করার জন্য লেখককে কত আত্মত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় মন্তব্য করেছিলেন যে, মুকুন্দরাম এ যুগে জন্মালে ঔপনাসিক হতেন। অনিবার্যভাবে তাঁর বাস্তবতাবোধ, বিশদতাজ্ঞান (সেন্স অব্ ডিটেইলিং), চরিত্রচিত্রণে নৈপুণ্য, সংলাপ-বয়ন এবং জীবনদৃষ্টি সমালোচককে এমনতরো বাক্য উচ্চারণে উৎসাহিত করেছে। মুকুন্দরাম এ যুগে একজন ঔপন্যাসিক না হলেও সার্থক গদ্যকার যে হতেন, এতে সন্দেহ নেই। অথচ চণ্ডীমঙ্গলের লোকমান্য কবিরূপেই তাঁর প্রতিষ্ঠা। 

কিংবা প্রেম রসময় কৃষ্মের স্বরূপ।

তার শক্তি তার সহ হয় একরূপ।।

শেষলীলায় প্রভুর বিরহ উন্মাদ।

ভ্রমময় চেষ্টা সদা প্রলাপময় বাদ৷৷

গদ্য-পদ্যের দ্বন্দ্বে আরেকটি কথা উচ্চরিত হয়। তা হল সাহিত্যের আদি মাধ্যম হল পদ্য, গদ্য পরে এসেছে। রবীন্দ্রভাষায় ‘গদ্য এল অনেক পরে'। তাহলে এখানে মেনে নেওয়া ভালো যে, সমস্ত প্রকাশকে ছন্দোবন্ধনে বাঁধা গেল না দেখে গদ্যের ব্যবহার শুরু হল। গ্রিকরা অনেক আগেই বুঝেছিলেন যে, ছন্দোবন্ধনে যুক্তবদ্ধ চিন্তার যথাযথ ভাব অনুসরণ করা সম্ভব নয়। মানুষ দেখেছে যে, বৌদ্ধিক যুক্তি হল যুক্তির নৈয়ায়িক অবয়ব। গদ্যের পক্ষে প্রয়োজনীয় কাজগুলোর সংশ্লেষণ-কর্ম সম্ভব হলেও নান্দনিক হয়ে উঠতে সময় লেগেছে। বাংলা গদ্যের ইতিহাস এই সাক্ষ্যই দেয়। বাংলা গদ্যে বিষয়ানুগ ভাব কাটিয়ে সাহিত্যযুগ দরকারের জগৎ থেকে অদরকারের জগতে তাকে পৌঁছে দিয়েছে। চিন্তার যথাযথ রূপ দিতে গেলে গদ্যেরই প্রয়োজন। ছন্দ, স্পন্দ এবং মিল এ বিষয়ে বাধা । কিন্তু গদ্য যথাযথ চিন্তার ভাষারূপেই নয়, বর্ণনার ক্ষেত্রে এই কাজ করে থাকে। একটি বর্ণনা তা রাস্তা, শোবার ঘর, অরণ্যভূমি কিংবা একজন জেলখাটা আসামীর যাই হোক না কেন, তা গদ্যেই সম্ভব। এর সঙ্গে জড়িত মানসিক প্রতিক্রিয়াগুলি তার বর্ণনার বাইরের বিষয়। কিন্তু এ ধরনের গদ্য শৈলী-আলোচনায় অতিরেক (রিডানডেন্ট)। কেননা এখানে যথাযথতা থাকলেও কল্পনার উদ্দীপন নেই। এবারে তাই মানসিক প্রতিক্রিয়ার মূল খুঁজে দেখা যাক একটি গদ্যান্বয়ী কবিতা থেকে :

সাপমাসী উড়ে যায়; দাঁড়কাক অশ্বত্থের নীড়ের ভিতর

পাখনার শব্দ করে অবিরাম; কুয়াশায় একাকী মাঠের ঐ ধারে কে যেন দাঁড়ায়ে আছে; আরো দূরে দু-একটা স্তব্ধ খোড়ো ঘর

পড়ে আছে; খাগড়ার বনে ব্যাং ডাকে কেন—থামিতে কি পারে ; (কাকের তরুণ ডিম পিছলায়ে পড়ে যায় শ্যাওড়ার ঝাড়ে।) আবার যেখানে ধর্ম-দর্শন-আধ্যাত্মিক তত্ত্বের ব্যাখ্যার প্রয়োজন, সেখানেও কবিতা গদ্যাকৃতি ধারণ করেছে। মিল এখানেও আছে হয়তো। কিন্তু তা কবিতার বাইরের ঠাট বজায় রাখার জন্য। বিপ্রতীপরূপ (ইনভার্সন) বা কর্তা- কর্ম-ক্রিয়ার বিপর্যাসও একই কারণে স্থান পায়। অর্থাৎ লেখার জগতেও বক্র কবিভাষার চেয়ে প্রত্যক্ষ, সংপ্রেষক গদ্য বেশি কার্যকর রূপ নিয়েছে। যেমন :

বউও উঠানে নাই—পড়ে আছে একখানা ঢেঁকি;

ধান কে কুটিবে বল—কত দিন সে তো আর কোটে নাকো ধান.......

ভাঁড়ারে ধানের বীজ কলায়ে গিয়েছে তার দেখি,

তবুও সে আসে নাকো, আজ এ দুপুরে এসে খই ভাজিবে কি?

(রূপসী বাংলা : জীবনানন্দ )

গদ্যভাষার লিখিত রূপের কোনো উপভাষা নেই—একথা ঠিক। কিন্তু একেবারে গদ্য এবং গদ্যান্বয়ী কবিতার মধ্যে ফারাক আছে। এখানে গদ্য-পদ্যের এক আপোষকামিতা দেখা যাচ্ছে। এসব উদাহরণে কবি বাঁধা সড়ক থেকে সরে আসছেন- -এমন অভিযোগ করা যায় না। বরং কবি ভাষার সুপ্রয়োগের ধারণাটি যথার্থ বলবৎ করছেন, এমন বলা চলে। ভাব এখানে উপযুক্ত ভাষা খুঁজছে। তাই তা কবিতার গণ্ডি না পেরোলেও গদ্যরূপকে হেলাফেলা করতে পারছে না।

আলোচ্য অংশের শেষ প্রশ্ন গদ্যকবিতা নিয়ে। ওপরের অবস্থাগুলো কী কী গদ্যকবিতার আবির্ভাবকে ত্বরান্বিত করেছে? এর উত্তর দেওয়া সহজ নয়। কেননা সাহিত্যে পদ-কবিতারূপের পরে গদ্যের সূচনা হল (অন্তত লিখিতরূপে)। কবিতার ক্ষেত্রে গদ্যকবিতা এল আরও পরে। পদ্যছন্দকে সরিয়ে দিয়ে গদ্যকে আশ্রয় করা ছন্দের বন্ধনমুক্তি নয়। ছন্দোমুক্তি হল পর্ব-সুষমার বন্ধনকে ভাঙা।কেউ কেউ আবার কবিতার চর্চা করেছিলেন গদ্যের জগতে বসেই। সেখানে ছন্দোমুক্তির প্রশ্ন অবান্তর। আসলে তাদের মনে হয়েছে গদ্য সরাসরি বা একটু বেশ পালটে কবিতায় আসতে পারে। গদ্যকবিতায় সবচেয়ে বড়ো হল—সংক্ষিপ্ত বাক্‌পর্ব, দ্রুত-নিয়মিত যতিপাত, সঘন শ্বাসাঘাত, মূল গদ্যের থেকে আলাদা এক স্পন্দনের সঞ্চার। এ কাজ করতে গিয়ে বিপ্রতীপ বাক্য, ক্রিয়াহীন বাক্য এবং সমান্তরালতা গঠনের প্রয়োজন আছে। এই কাজ কোনো আধুনিক কবিও স্বস্তির সঙ্গে করে উঠতে পারেন না। আসলে কবিতার প্রথম আর শেষ শর্ত হল, কবিতা হয়ে ওঠা। যদি প্রশ্ন ওঠে, তা কি করে বুঝব? উত্তর—আগের পড়া কবিতা যেভাবে মনকে আনন্দিত, যন্ত্রণার্দ্র, রক্তাক্ত করেছে, তার সঙ্গে মিলিয়ে। প্রাক্তন কাব্যপাঠের অভিজ্ঞতা হল পরশপাথর। নূতন কাব্যরচনা সোনা না গিল্টি, তার স্পর্শেই তা বুঝতে পারা যায়।

অন্ধবিশ্বাসের বশে তখন মানুষ খোঁজে ফের

অশক্ত বা অসম্পৃক্ত অধিদৈবতের

পুরাতন পদপ্রান্তে সংগতি বা পৈত্রিক অমিয়,

কার্যত যদিও ঐকান্তিক, শূন্য তারে করে বিশ্বম্ভর ;

কারণ তখন বায়ু অনিলে মেশে না, অবস্কর

ভস্মান্ত হয় না, অনুব্যবসায়ী ক্রতু

(বোঝে সন্তাপেও ব্যাপ্ত ব্রহ্মাণ্ডের বীতাগ্নি বেপথু, সংবর্ত : সুধীন্দ্রনাথ

‘সংবর্ত’ কবিতার এই অংশ পড়ে পাঠকের প্রথম প্রতিক্রিয়া জাগে দুর্বোধ্যতার। দুর্বোধ্য বললেই সব দায়িত্ব ফুরিয়ে যায় না। কেননা ‘দুরূহতার দুটো দিক আছে, একটা পাঠকের দিক, একটা লেখকের দিক। যে দুরূহতার জন্ম পাঠকের আলস্যে তার জন্য কবির উপরে দোষারোপ করা অন্যায়।' এই দোষারোপ ন্যায়-অন্যায় যাই হোক, বর্তমান কালে পাঠকেরা বহুজ্ঞানী রূপের পক্ষপাতী। পাঠকের কাছে কবিতা হাতের মুঠোয় আমলকীর মতো সহজলভ্য হবে, এটা কবিরা মানেন না। কেননা একালে জ্ঞানের সীমানা অনেক প্রসারিত। সেখানে শুধু ছন্দমিল, সামান্য কথার বিলসন তাদের কাছে শক্তির অপব্যয়। আধুনিক যুগের জটিল পরিচয়কে প্রকাশ করার ধরন পালটে গেছে। পুরোনো কাব্যিক শব্দেরা এখন নিষ্প্রাণ। তাই কবিকেও ভাষা-পাথরের বুকে সন্ধান চালিয়ে তক্ষণ করে খুঁজেনিতে হয় নিজের বলার কৌশল। এই কৌশল গ্রহণে কবি যেমন শ্রমশীল, পাঠককেও তেমনি পরিশ্রমী হতে হবে। আলোচ্য অংশে যে দুরূহতা জাগে, তা আপাত। কঠিন শব্দের অর্থ উদ্ধার করে পাঠক দেখেন তার চারপাশের অভিজ্ঞতাকেই আঁকা হয়েছে। কিন্তু সেই ছবির রং তার চেনাজানা রংয়ের বিন্যাস থেকে আলাদা । এ তো গেল শাব্দিক দুরূহতার দিক, যেখানে শব্দার্থের খোলশ ছাড়িয়ে কাব্যের সার গ্রহণ করা যায়। কিন্তু অনেক সময় কবিরা বহুপঠনের অভ্যাসে এমন সব উল্লেখ, উদ্ধৃতি, প্রসঙ্গ তোলেন, তা তাঁর একান্ত হলেও পাঠকের কাছে বাধাস্বরূপ। এখানে সংশ্লেষণের চেয়ে নিজের ব্যক্তিগত জ্ঞানতৃষ্মা, পঠনাভ্যাস এবং একটা চেষ্টিত উপমা যেন সক্রিয় হয়ে ওঠে।

কবিতার শৈলীতে তাই আমরা গদ্যান্বয়ী অংশ, দুর্বোধ্যতা, মূল সুর, লেখকের চিত্রকল্প, প্রকরণের সঙ্গে প্রসঙ্গের মিল-অমিল, উল্লেখের বৈচিত্র্য, অলংকারের পরিমাণ, বাক্যের গড়ন এবং সর্বোপরি অবয়বজ্ঞান লক্ষ করব। কবিতার শরীরে লেখকের মন কতটা ধরা পড়েছে, এটা জানা দরকার। এই কাজ করতে গেলে খুব পরিচিত একটা কবিতা বাছলে ভালো হত। আমরা একটি অল্প-চেনা কবিতা নির্বাচন করেছি। কবিতাটির নাম ‘পরস্পর', লেখক জীবনানন্দ দাশ। কবিতাটি গড়ন, বক্তব্য এবং যুগের ছবিতে আমাদের ভাবিয়েছে। এই ভাবনা কেন জাগল, তার উত্তর খুঁজতেই আমাদের আলোচনা চলবে। এখানে বলা ভালো কবিতাটি দীর্ঘ। কারোর কারোর মতে দীর্ঘ কবিতা আসলে খণ্ড কবিতারই মালা। একটি কবিতার শৈলীবিচার সম্ভব হলেও দীর্ঘ কবিতায় তা সম্ভব নয় বলে তাঁরা মনে করেন। দুটি মতামতই চরম। জীবনানন্দের ‘ধূসর পাণ্ডুলিপি'র এই কবিতাটি কাব্যরসিক মহলে প্রায় অনালোচিত। অথচ কবিতাটিতে বক্তব্য ছাড়াও শৈলীর বিচিত্র প্রকাশ দেখতে পাই। এমনকি জীবনানন্দের বিশেষ প্রবণতা বোঝাতে এই কবিতাটির মূল্য আছে। কবিতার কথা জানতে গেলে জীবনানন্দের সুখ্যাত কবিতাগুলির পাশে এটির মূল্য আছে। জীবনানন্দের কাব্যিক জীবনের প্রাথমিক ভাঙচুরের কথাও এই কবিতা থেকে জানতে পারি। অন্যদিকে এটি সংক্ষিপ্ত নয়, দীর্ঘ কবিতা। এর মধ্যে কাহিনি বয়নের ঢং আছে। প্রাচীনকালের নারী থেকে একালীন পণ্যার মধ্যে নারীচেতনার একটা পরিবর্তনস্রোত লক্ষ করা যায়। সংলাপ আছে। আসলে এটি ছোটোগল্প না হয়ে কীভাবে কবিতা হল, কবিতাটির শুরুতে এক গল্পের আসর, যেখানে কবিই কথক। তিনি রূপকথা শোনান উপস্থিত সকলকে, এমনকি রূপকথার নায়ক (রাজ)কুমারকেও। একটি নিঃসাড় পুরী, পাহাড়, পালংকে শোয়া রাজকন্যার শরীর—রূপকথার সব আয়োজনই তিনি করেছেন। কিন্তু রূপকথার গল্পে লেখকের নিজের কথা থাকত না। একজন রূপসীর সন্ধানে পৃথিবীর পথে ঘুরে ঘুরে সেই রাজকন্যার সন্ধান তিনি পেয়েছেন। রাজকন্যা ঘুমের অতলে। কবি তার পাষাণের মতো হাতে প্রাণ জাগাতে পারেননি। এমনও সংশয় জেগেছে যে, হৃদয় থাকলেও তা কবির জন্য প্রস্তুত ছিল না। তাই বিনতি জাগে যদি রাজকুমার তার হাত ধরে হৃদস্পন্দন জাগান। এখানে প্রথম গল্প বা অংশের সমাপ্তি। এ যুগের লেখক রূপকথার জগতে প্রাণের স্পন্দন শুনতে পেলেন না। তার কারণ তিনি বুঝেছেন যে ঐ জগৎ আগেকার, সেখানে আধুনিক মানুষের হাত দিয়ে দ্বার খোলার উপায় নেই। আবার ঐসব অসাধারণ রূপবতীদের রূপ থাকলেও জীবন্ত ছিল না।

রাজকন্যার রূপচিত্রটি উদ্ধার করা যাক :

মসৃণ হাড়ের মত শাদা হাত দুটি,

বুকের উপরে তার বয়েছিল উঠি।

(রাজ)কুমার দ্বিতীয় গল্পের কথক। তার চোখে নারীর অন্য রূপ ফুটে ওঠে। সেও ঘুমন্ত। এখানে পাহাড় নেই, নিস্তব্ধতা নেই, নদী আছে। সে নারী মৃচ্ছকটিকের বসন্তসেনার মতো নয়, ‘কিংবা—হবে তাই”। বসন্তের আহ্বানে তাকে দেখেছিলেন নদীর কিনারে ‘জমানো ফেনার মত’। এ নারীও অচেতন। হাতির দাঁতের মতন শাদা হাতে শাদা স্তন ঢেকে সে শুয়ে আছে। এই দেখাও মায়াবী। নিবু-নিবু জ্যোৎস্নায় এই ছবি, স্বপ্নের এই প্রাণহীন প্রতিমা দিন বা বাস্তবতার প্রখর আলোয় মুছে যায়। রাজকুমার তার সন্ধান করেন। প্রবহমানতার কথা আগে তুলেছিলাম। এবারে দৈর্ঘ্য বা পক্তির অসমান ব্যবহার ভাবা যাক। সমিল প্রবহমান পয়ার ছন্দ এখানে লেখকের প্রয়োজন সিদ্ধ করেছে। ভালো কবিতায় এভাবে ছন্দ অন্তরঙ্গ হয়ে ওঠে।

এবার ওঠে পরিকল্পনার কথা। কয়েকটি চরিত্র এনে গল্পের আভাস জাগলেও, কথাবার্তার আবহাওয়া রচিত হলেও কবির চোখে নারীর রূপ আড়ালে থাকে নি। এই কবিতাটি দীর্ঘ। কেননা যুগে যুগে অঙ্কিত নারীরূপের অসারতা দেখানো হয়েছে। ‘সোনার আঁচল খসা, হাতে দীপশিখা' করে যে নারীকে রবীন্দ্রনাথ এঁকেছেন, সেই কল্যাণময়ীর ব্যাবহারিক রূপ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। যুগের কথা বা বাণী (স্পিরিট অব্ দা এজ) এভাবে কবিব্যক্তিত্বের (স্ট্যাম্প অব্ পার্সোনালিটি) স্পর্শে নবরূপ পায়। যুগ্ম বৈপরীত্যবাদ গদ্যশৈলী বিশ্লেষণকে কঠিন করে।

যেমন,

১. প্রচল শৈলীধারণা : খাঁটি, অলংকৃত, সাজানো, কৃত্রিম, সহজ, সরল, বিশদ

২. সাহিত্যপর্যায় বা প্রথা : ফোর্ট উইলিয়মের গদ্য, তৎসমপ্রধান গদ্যশৈলী

৩. প্রভাবজাত রূপ : মহাকাব্যিক শৈলী

৪. প্রায়োগিক : বৈজ্ঞানিক, সাংবাদিকসুলভ

৫. বিশেষত্ববোধক : রাবীন্দ্রিক, বঙ্কিমী, প্রমথীয়